স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ঘাট সংলগ্ন এলাকায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চারজনের বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায়। এরমধ্যে তিনজনের বাড়ি একই গ্রামে। নিহতদের মরদেহ মঙ্গলবার সকালে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনদের আহাজারিতে পুরো এলাকার আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে। মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনির হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকালে নিহতদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এর আগে সোমবার পথে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় তাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হয়েছিলো। পরবর্তীতে সোমবার সন্ধ্যায় মরদেহগুলো স্বজনরা বুঝে পেয়েছেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সযোগে সড়কপথে মরদেহগুলো নিয়ে মেহেন্দিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে মঙ্গলবার সকালে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছার পর সকাল নয়টার দিকে উলানিয়া ইউনিয়নের পূর্বষাট্টি গ্রামের তিন বাসিন্দার জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। আর পাতারহাটের ব্যবসায়ীর সকাল ১০ টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়। ইউপি সদস্য আরও জানান, দুর্ঘটনায় তার আপন চাচাতো ভাই ও মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার খরকী এলাকার আব্দুল মান্নান চাপরাশির পুত্র এবং পাতারহাট বন্দরের মুদি ব্যবসায়ী মনির চাপরাশি (৩৫) নিহত হয়েছেন। সে আসন্ন ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে ঢাকায় মালামাল আনতে গিয়েছিলেন। মালামাল জাহাজে তুলে দিয়ে নিজে সড়ক পথে ফিরছিলেন। দোকানের জন্য কেনা ঈদের মালামাল এখনো বন্দরে পৌঁছেনি কিন্তু তার আগে পথিমধ্যে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় চির বিদায় নিতে হয়েছে মনিরকে। পরিবারের একমাত্র ছেলে মনিরের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। অপরদিকে এ দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করা বাকি তিনজন হলেন, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া ইউনিয়নের পূর্বষাট্টি গ্রামের বাসিন্দা সাদেক বেপারীর পুত্র ও উলানিয়া বাজারের আহাদ ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী দুই ভাই রিয়াজ হোসেন (৩৩) এবং সাইফুল ইসলাম (৩৫)। এছাড়া একই ইউনিয়নের আশা গ্রামের বাসিন্দা রতন হাওলাদারের পুত্র উলানিয়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম (২৭)। নিহত রিয়াজ ও সাইফুলের বড় ভাই আজাদ হোসেন জানান, তার দুই ভাই দোকানের মালামাল কেনার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলো। ফেরার সময় পদ্মা পাড়ি দিতে তারা প্রথমে গাছবাহী একটি ট্রলারে ওঠেছিলো। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নামিয়ে দেওয়ার পর তারা স্পিডবোটে উঠে দুর্ঘটনায় দু’জনই প্রাণ হারায়। সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার খবরে তার ভাইদের নাম প্রথমে জানতে পারেন। পরে শিবচর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ফোনে দুর্ঘটনার খবরটি নিশ্চিত করা হয়। তিনি জানান, নিহত সাইফুল মাত্র তিন মাস আগে বিয়ে করেন, আর রিয়াজের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। অপরদিকে অপর নিহত উলানিয়া বাজারের বোরকার দোকানের ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামও একই দুর্ঘটনায় নিহত আজাদের ভাইদের সাথে ঢাকায় গিয়েছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিবচরের দূর্ঘনায় চারজনের এ মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় পুরো মেহেন্দিগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের কান্নায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আবুল কালাম জানান, শিবচরের দুর্ঘটনায় মেহেন্দিগঞ্জের চারজন নিহত হয়েছেন, যাদের মরদেহ মঙ্গলবার সকালে স্ব-স্ব এলাকায় দাফন করা হয়েছে। এছাড়া একই দুর্ঘটনায় বিভাগের মধ্যে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। যারমধ্যে বরিশালের বন্দর থানার ভেদুরিয়া এলাকার আলী আহমেদের পুত্র আনোয়ার চৌকিদার (৫০), বানারীপাড়া উপজেলার হাশেম বেপারীর পুত্র আলাউদ্দিন বেপারী (৪৫), ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রাজাবাড়িয়া এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুস শিকদারের পুত্র নাসির উদ্দিন (৪৫), পিরোজপুর সদর উপজেলার চরখানা এলাকার ওহিদুরের পুত্র বাপ্পী (২৮) এবং ভান্ডারিয়া উপজেলার পসারিয়াবুনিয়া এলাকার রঞ্জন অধিকারীর পুত্র জনি অধিকারী (২৬)।
Leave a Reply